না, চিকু এখনও কথা বলতে পারেনা । দু একটা শব্দ বলে । কিন্তু আমি নিশ্চিত ও বলতে শিখলে এটাই বলবে। তাই, লেখাটা এভাবেও শুরু করা যায়, সিম্বা, চিকু এবং আমরা । অথবা কালিম্পং এ কয়েকদিন । অথবা মেঘ পাহাড়ের দেশে । অথবা পাহাড়ে ল্যাদ খাওয়া । অথবা .... যা মাথায় আসে ।
চিকু হওয়ার পর থেকে সেরকম ভাবে বেরোতে পারিনি । কাছে পিঠে বলতে দীঘা, ডায়মন্ডহারবার এর চৌহদ্দি পার করে পাহাড়ের হাতছানিতে সাড়া দেওয়ার পথে কিছু অন্তরায় তো ছিলই । এবার সবকিছু কে সরিয়ে রেখে ঠিক করলাম পাহাড়ে যাবো ।
পাহাড়ে যাবো । তাই প্রথম কাজ হলো এনজেপি বা বাগডোগরা, যেটা সুবিধা হবে সেটাতে যাওয়া আসা টা কনফার্ম করা । আর বাকীটা খুব সহজ । চিকুর ২ বছর হতে এখনো ৩ মাস বাকী । তাই ওকে নিয়ে ট্রেনে নাইটজার্নি করার চেয়ে ফ্লাইট এ যাওয়া অনেক সুবিধাজনক হবে । সময়টা হাতে কম । ফ্লাইট এর দাম চড় চড় করে বেড়ে যাচ্ছে । সুযোগ বুঝে অফার দেখে টিকিট বুকিং ও হলো । কিন্তু যাবো কোথায় ? ঠিক করলাম একটু অফবিট ডেস্টিনেশন এ যাবো । কিন্তু খুব একটা অফবিট হলেও সমস্যা, কারণ সাথে রয়েছে চিকু । তাই এমন জায়গাতে যেতে হবে যেখানে একটু নিরিবিলি এবং শান্তিতে কয়েকটা দিন কাটানো যায়, আবার দরকারে নগর জীবনের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা গুলো পাওয়া যেতে পারে খুব সহজেই । প্রাথমিকভাবে ঠিক হল আমরা কালিম্পং যাব । কিন্তু কালিম্পং শহরে থাকবো না । কালিম্পং থেকে কিছু দূরে কোন গ্রামে থাকবো । যেখান থেকে কালিম্পং সহজে যাওয়া যেতে পারে, কিন্তু কালিম্পংয়ের কোলাহল থেকে মুক্ত হতে হবে সেই গ্রাম । বেশ কিছুটা খোঁজাখুঁজির পর আমার এক কলিগের থেকে জানতে পারলাম এই গ্রামের কথা । তার কাছে পেলাম কেকে হোমস্টের ফোন নাম্বার । প্রাথমিকভাবে নেটে একটু ঘাটাঘাটি করে বেশ পছন্দ হয়ে গেল জায়গাটা । আর সরাসরি ফোন করলাম কেকে হোমস্টের মালিক শরিফজি কে ।
তাঁর সাথে কথা বলে একটু অবাক হলাম । এরকম একটা অফবিট জায়গাতে যেখানে জেনারেলি টুরিস্টরা এক রাত্রি কাটায়, সেখানে চার দিন থাকবো শুনে তিনি তো অবাক হলেন । তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন যে ‘আপলোগ বোর নেহি হো জায়েঙ্গে ?” আমারও কনফিডেন্সে একটু ঘাটতি হল এবার । কিন্তু আমি তাকে বোঝালাম যে আমরা আর পাঁচজন টুরিস্টের মতো চিন্তা ভাবনা করে আসছি না । আমরা নিপাট ছুটি কাটাতে আসছি, তাই বোর হওয়ার কোনো ব্যাপার নেই । তার সাথে ফাইনাল কথাবার্তা বলে হোমস্টে বুক করলাম ।
সংসীর । একথকথায় প্রকাশ করা মুশকিল । কালিম্পং থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে সিংকোনার বনে পাহাড়ের ভাঁজে ছোট্ট একটি মিষ্টি গ্রাম । প্রাণভরে শ্বাস, কানভরে পাখির ডাক আর মনভরে প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার জন্য এরকম জায়গা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর । গ্রামের নীচে থাকা পার্বত্য বনভূমি থেকে ভেসে আসা কর্কশ ময়ূরের ডাক, কানের পাশে কিচির মিচির করা চড়াইয়ের দল, মেটে হাঁড়িচাচা কিম্বা দোয়েল অথবা একঝাঁক ছাতারে, বিশ্বাস করুণ আপনাকে এতটুকুও বিব্রত করবেনা । বরং আপনি প্রকৃতির মধ্যে আরও বেশী বেশী করে ডুবে যাবেন ।
এই সংসীর গ্রামে থাকার একমাত্র জায়গা হল কেকে হোমস্টে । পাহাড়ের কোলে এক অপূর্ব থাকার জায়গা । এক ভদ্রলোক এবং তাঁর স্ত্রী মিলেই চালান এই হোমস্টেটি । সামনে সাজানো ফুলের বাগান, সুন্দর বসার জায়গা আর সামনের সব্জীবাগান থেকে তুলে আনা শাক সব্জী দিয়ে আপনার প্রাতরাশ অথবা মধ্যাহ্নভোজন অথবা বিকেলের টিফিন কিম্বা রাতের খাবার, থাকার অনুভূতিটাই পাল্টে দেবে । আর যার কথা আলাদা করে বলবো বলে বাঁচিয়ে রেখেছি সে হলো সিম্বা । এবং তাঁর গার্লফ্রেন্ড । হ্যাঁ শুধু সিম্বার মতো একজন বন্ধু পাওয়ার জন্যই সংসীর আসা যায় । দশাশই চেহারা । নেকড়ের মতো ভয়ঙ্কর চাহনি । কিন্তু ভীষন শান্ত অথচ পরাক্রমী । কে কে হোমস্টেতে এসে নামার সাথে সাথেই আপনাকে চিনে নেবে সে । তারপর থেকে আপনি যেখানেই যাবেন, সাথে সিম্বা যাবো পাহারদার হিসেবে । পাহাড়ে গিয়ে পথ হারাবার ভয় নেই । সাথে থাকবে সিম্বা । অথবা আপনি নিজে থেকে কোনদিকে না গেলে শুধু সিম্বাকে অনুসরণ করুণ । আপনের ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে পুরো এলাকা । এতটাই জনপ্রিয় সে, তাকে পুরো এলাকার সকলেই চেনে । আর আপনি যদি ভাবেন যে আপনার ঘোরার পথে চিল চিৎকার জুড়ে আপনাকে অস্থির করে তুলছেন, তাহলেও ভুল করছেন । সিম্বা হলো সিম্বাই ।
আর ছোট্ট দুটি ফুটফুটে মেয়ে কাদম্বরী আর কাব্য সারাক্ষণ পায়ে পায়ে যেন মাতিয়ে রেখেছে এই হোম স্টে টি ।
বাগডোগরা এয়ারপোর্ট এ নেমেই লাগেজ কালেক্ট করে নিয়ে চললাম পার্কিং এর দিকে । সেখানে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন আমাদের গাড়ীর ড্রাইভার । ফোন নাম্বার ছিল । কল করে তার সাথে দেখা করে নিলাম । আর ব্যাগপত্র ইনোভার পিছনে চাপিয়ে চললাম গন্তব্যের দিকে । শিলিগুড়ি শহর ছাড়িয়ে শাল সেগুনের জঙ্গলের বুক চিরে মহানন্দা ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি মধ্য দিয়ে গাড়ি চলেছে সেবক এর পথে । এই রাস্তা টির মধ্যে এতটা প্রাণ আছে যে এখানে এলেই আপনার মন ভালো হয়ে যেতে বাধ্য । বেশ কিছুক্ষণ চলার পর তিস্তার ওপর করোনেশন ব্রিজ । আমরা আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথে তিস্তার পাড়ে পাড়ে এগিয়ে চলেছি । মাঝখানে একটু চায়ের ব্রেক নিতেই হত । ড্রাইভার দাদাকে গাড়ি থামাতে বললাম । তারপর খিদের পেটে গরম গরম নুডলস আর এক প্রস্থ চা যেন অমৃতের মত লাগছিল । এদিকে বেলা গড়িয়ে আসছে । সন্ধ্যা নামার মুখে । আমাদের গন্তব্য সংসের গ্রাম । কিন্তু ড্রাইভার নিজেও রাস্তা ঠিক ভাবে চেনেন না । তার সাথে কথা বলিয়ে দিয়েছি হোম স্টের মালিকের । তিনি পথনির্দেশ দিয়ে দিয়েছেন । ন্যাশনাল হাইওয়ে থেকে যে রাস্তাটা কালিম্পং এর দিকে উঠে গেছে ওয়েলকাম টু কালিম্পং লেখা সেই বোর্ড ছাড়িয়ে আমরা এগিয়ে চললাম । আবার জিজ্ঞেস করতে তিনি বললেন, এর সামনে একটি রাস্তা আছে যেখান থেকে খুব সহজেই ওখানে যাওয়া যায় বলে শরীফজি জানিয়েছেন । বেশ কিছুক্ষণ আসার পরে আমরা একটু অধৈর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলাম আর কতক্ষণ ? অনেকটা এগিয়ে এসে রংপো চেকপোস্ট থেকে কয়েক কিলোমিটার আগে একটি জায়গাতে গাড়ি থামিয়ে শরীফজিকে ফোন করলেন । একটু এগিয়ে এসে ডান দিকে একটি পাহাড়ি রাস্তা উঠে গেছে । সেই রাস্তা ধরে কুড়ি পঁচিশ মিনিট ।
গুগল ম্যাপে যে রাস্তা দেখাচ্ছে সেটি কালিম্পং হয়ে ঘুরে আসতে হবে । এছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই । তাই অজানা পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে রাতের অন্ধকারে যাওয়াতে আমরা একটু কুন্ঠা বোধ করলাম । কিন্তু উপায় কিছু নেই । এখন কালিম্পং হয়ে ঘুরে আসতে গেলে অনেকটা সময় লেগে যাবে । ওই পাহাড়ি রাস্তায় আমাদের পথ চলা শুরু । গুগল ম্যাপে রাস্তাটি দেখাচ্ছেনা । খালি দুটি বিন্দুর মধ্যে একটি ফাঁকা জায়গা দিয়ে আমরা যাচ্ছি । রাস্তার দুপাশে ঘন জঙ্গল । রাস্তায় কোনো গাড়ি দেখা নেই । কোনো ঘরবাড়ি ও দেখছি না । আঁকাবাঁকা রাস্তায় মধ্য দিয়ে আমরা উঠে চলেছি । একটা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা । প্রায় ২৫-৩০ মিনিট এভাবে চলার পথ অবশেষে একটি পাহাড়ের বাঁকে এসে চোখ আটকাল । কেকে হোমস্টে । অবশেষে পৌছালাম ।
ব্যাগপত্র রেখে একটু ফ্রেশ হয়ে বসলাম বাইরের টেবিল এ । উল্টোদিকের পাহাড়টা হলো রাবাংলা, সিকিম । পাহাড়ের গায়ে বিন্দু বিন্দু আলো এর আগের অনেকবার দেখেছি । কিন্তু এবারের দেখাচ্ছ সম্পূর্ণ আলাদা । প্রায় অন্ধকার একটা জায়গা থেকে সামনের পাহাড়গুলোকে গ্যালাক্সীর মতো লাগছিল । একটু পরেই চিকুর জন্য স্পেশাল খিঁচুড়ি এল । ওকে খাইয়ে দাইয়ে রেডি করার মধ্যেই ডিনারের ডাক এল ।
বাগানের বাঁধাকপির সব্জী, কষা মুরগী আর রুটি ।
নতুন জায়গা । তাই চিকুর রাত্রে সেরকম ঘুম হলো না । আর চিকুর ঘুম না হওয়া মানে আমাদেরও সারারাত জেগে কাটানো । ভোর হতেই বিছানা ছাড়লাম । আর তখন চিকুর ঘুমোনোর সময় হল ।
বাইরে বেরিয়ে দেখি অমৃতা এবং রোহিত হোমস্টের বাইরের গোল মতো বসার জায়গায় বসে । আমি গুড মর্নিং করলাম । চিকু সারারাত জেগে কিছুক্ষন আগে ঘুমিয়েছে । তাই নিবেদিতারও উঠতে অনেকটা দেরী । আমি, রোহিত আর অমৃতা মিলে একটু মর্নিং ওয়াকে বেরোলাম ।
সিম্বার গল্প শুনেছিলাম । কিন্তু সিম্বার সাথে সেভাবে পরিচয় হয়নি । আজ সকাল থেকেও সিম্বাকে দেখতে পাচ্ছিনা । কিন্তু সিম্বার বান্ধবী রয়েছে । তাই আমাদের মর্নিং ওয়াকের সাথী সেই । ছোট্ট সংসীরে প্রতিটি বাড়িতেই পোষা কুকুর রয়েছে । তাই রাস্তায় আসতেই অচেনা লোক দেখে সবাই ঘেউ ঘেউ করছে । কিন্তু সাথে রয়েছে সিম্বার সাথী । তাই কেউ কাছে আসছে না । আমরা ঠিক করলাম পাহাড়ের উপরের দিকে হাঁটবো । তাহলে ফেরার সময় কিছুটা সুবিধা হতে পারে । এই পাহাড়ী গ্রামের সকালটা ভীষন মিষ্টি ।
ফুলে ফুলে সাজানো এই ছোট্ট পাহাড়ি গ্রামে ছোট্ট ছোট্ট বাড়ি ঘর । পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে সুন্দর সাজানো রঙিন বাড়িগুলো দেখে মন এক অদ্ভূত ভালোলাগায় ভরে ওঠে । আমরা রাস্তার উপর দিয়ে হাটতে লাগলাম । প্রায় ২৫ থেকে ৩০ মিনিট হাঁটার পর ভাবলাম রাস্তার পাশে থাকা একটি শর্টকাট ধরে ওপরে রাস্তায় গিয়ে উঠব । গ্রামের একজন যুবক সেই রাস্তা দিয়ে যেতে আমাদের মানা করলেন । বললেন আপনারা যে রাস্তায় এসেছেন সেই রাস্তা ধরেই সোজা কিছুটা এগিয়ে যান, সেখানে রয়েছে ব্রিটিশ আমলের এক বাংলো, যেখান থেকে সামনের প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করা যায় । আমরা হাঁটতে শুরু করলাম । আরো পনেরো-কুড়ি মিনিট হাঁটার পর ব্রিটিশ আমলের সেই বাংলোর সামনে এসে দাঁড়াতেই ভেতর থেকে একজন বেরিয়ে এলেন । তার সাথে কিছুক্ষণ কথাবার্তা হওয়ার পর তিনি বললেন যে এখন এই বাংলোর ভিতরে প্রবেশ নিষেধ । আমরা বাংলোর পাশ থেকে সামনের তিস্তা নদী এবং তাকে ঘিরে থাকা পাহাড়ের সারির মধ্যে মেঘ রোদ্দুরের লুকোচুরি দেখতে দেখতে মোহিত হয়ে গেছিলাম । অনেকটা সময় কাটিয়ে ফেলেছি, এবার হঠাৎ করে পকেটের মধ্যে থাকা মুঠোফোনটি বেজে উঠল ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং । ফোনের ওপারে নিবেদিতা । তাকে জানালাম আমরা অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে আসছি । আসার সময় যে রাস্তাটা প্রায় ৪৫ মিনিটে পার করেছিলাম, ফেরার সময় আসতে ২০ থেকে ২২ মিনিট লাগলো । অনেকটা হেটে একটু ক্লান্ত বোধ করছি ঠিকই কিন্তু মনটা খুব ফুরফুরে হয়েছে । ফিরে এলাম কেকে হোমস্টে তে । চিকু ঘুম থেকে উঠে গেছে । তাকে ব্রাশ করানো হলো । আমরা সবাই ফ্রেশ হয়ে বাইরে টেবিলে এসে বসলাম । চা এল । আড্ডায় মেতে উঠলাম আমরা ।
প্রাথমিকভাবে ঠিক ছিল যে আমরা এই দিনগুলি পুরো শুয়ে বসে কাটাবো । কিন্তু অল্প বিস্তর ঘুরতে ইচ্ছে হলে ঘুরবো না এরকম কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে আসিনি । তাই একটু আধটু ঘোরা যেতেই পারে । এর মধ্যেই মোবাইল খুললে দেখা যাচ্ছে যে পশ্চিমবঙ্গে আসতে পারে এক প্রকাণ্ড ঘূর্ণিঝড় । ফনি । আর তা নাকি পাহাড়েও আছড়ে পড়তে পারে । তাই পরের দিকটাতে বাড়ি বসে কাটাতে হবে এই ভেবে আমরা ঠিক করলাম যে প্রথম দুদিন একটু আধটু করে বেরিয়ে নেব । ব্রেকফাস্ট কি খাব সেটা জেনে নিলেন ওনারা । তারপর শরীফজিকে জানিয়ে দিলাম যে আমরা আজ একটা গাড়ি নিয়ে ঘুরতে বেরোবো । কোথায় যাব এখনো ঠিক হয়নি । তবে লাভা লোলেগাঁও রিশপ, যতটা ঘোরা যায় ঘুরবো । উনি বললেন দশটার মধ্যে গাড়ি চলে আসবে । আপনারা ব্রেকফাস্ট করে রেডি হয়ে যান । আর লাঞ্চ তাহলে বাইরে করতে হবে ।
রেডি হয়ে ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসতেই চমকের শুরু । প্রথমেই একটি ট্রেতে সুন্দর করে সাজানো বাগান থেকে তুলে নিয়ে আসা ফ্রেশ স্যালাড । লুচি, আলুর দম ও ডিমের ওমলেট । ব্রেকফাস্ট করে আমরা ক্যামেরার ব্যাগ গুছিয়ে গাড়িতে উঠলাম । কোথায় যাব এখনো জানিনা । গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম যে আমরা আজ কতটা ঘুরতে পারি? ড্রাইভার বললেন লাভা লোলেগাঁও হো জায়েগা । আমরা ঠিক করলাম প্রথমে লোলেগাঁও যাব । সেখান থেকে ফেরার পথে লাভা । আর যদি সময় হাতে বেঁচে থাকে তাহলে রিশপ । গাড়ি চলছে তার আপন মনে পাহাড়ি রাস্তায় । এঁকেবেঁকে, কখনো মেঘ এর মাঝে । ছোট্ট ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম গুলো পার করে আমরা চলেছি লোলেগাও এর পথে । এর মধ্যে চিকুর দুষ্টুমি রয়েছে । কখনো সামনের সীটে, কখনো বাবা যে সিটে বসে সেখানে, কখনো বা গাড়ির যন্ত্রপাতি ধরে টানে । প্রায় ঘন্টা দুয়েক গাড়ি চলার পর আমরা একটি ভাঙা রাস্তার ওপর এসে উপস্থিত । এই রাস্তা ধরে যেতে হবে লোলেগাঁও । রাস্তার অবস্থা বেশ খারাপ ।
হালকা হালকা বৃষ্টি হচ্ছে । পাইন বনের মধ্যে আমরা । একটি মেঘের মধ্যে ঢুকে পড়েছি । সামনের ১০-১৫ ফুটের বেশি দেখা যাচ্ছে না । মেঘের মধ্যেই আমরা এগিয়ে চলেছি । এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা । কিন্তু একই সঙ্গে মন খারাপ । কারণ এরকম আবহাওয়া থাকলে আমরা লোলেগাঁও তে গিয়ে হয়তো গাড়ি থেকে নামতেই পারবো না । প্রায় কুড়ি পঁচিশ মিনিট এভাবে চলার পর আমরা লোলেগাঁও তে এসে উপস্থিত । ট্যাক্সি স্ট্যান্ড ছাড়িয়ে হ্যাঙ্গিং ব্রিজের সামনে আমরা যখন এলাম তখন আবহাওয়া এতটাই খারাপ যে আমরা জঙ্গলের ভিতরে যেতেই পারব না । তাই ড্রাইভারকে রিকোয়েস্ট করলাম ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের ওখানে গিয়ে আমরা প্রথমে লাঞ্চ করতে চাই । একটু মনঃক্ষুণ্ণ হলেন, কিন্তু তিনি আমাদেরকে নিয়ে এলেন এবং আমরা লাঞ্চের খোঁজে বেরিয়ে পড়লাম । খোঁজ করতে করতে একটি হোটেলে পেলাম যেখানে ম্যানেজার ভদ্রলোক এবং কিচেনে যে ছেলেগুলো কাজ করে তারা সকলেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার । পরিচয় হওয়ার পর জিজ্ঞেস করলাম লাঞ্চে কি পাওয়া যাবে ? উনি জানালেন মাছের ঝোল আর ভাত হবে । খিদের পেটে সেটাই অমৃত মনে হল । এর মধ্যে চিকুকে লাঞ্চ করাতে হবে । চিকুর লাঞ্চ আমরা সকালেই প্যাক করে নিয়েছিলাম । সকলের সম্মিলিত চেষ্টায় চিকুকে কিছুটা খাওয়ানো গেলো । আমরাও লাঞ্চ সেরে নিলাম । এবার লোলেগাঁও হেরিটেজ ফরেস্টের ওখানে যাব বলে মনস্থির করলাম । লোলেগাঁও তে হাঙ্গিং ব্রিজ এ যাওয়ার জন্য হেরিটেজ ফরেস্টের মুখে যে এন্ট্রান্স রয়েছে সেখান থেকে টিকিট নিতে হয় ।
টিকিট কাটার সময় সেখানে প্রথমে সতর্ক করে দিল যে আমরা যেন কোন বড় গাছের নিচে খুব বেশি সময় ধরে না দাঁড়িয়ে থাকি । ওপর থেকে ভিজে ডাল বা ঐ জাতীয় জিনিসপত্র পড়তে পারে । এরমধ্যে আবহাওয়া পরিষ্কার হতে শুরু করেছে । আমরা বেশ কিছুটা হেঁটে ব্রিজের সামনে এলাম ।
জঙ্গলটা সত্যিই হেরিটেজ ফরেস্ট । সুর করে ডাকা পাখির ডাক, লম্বা লম্বা গাছের ফাঁক দিয়ে উঁকি দেওয়ার সূর্যের আলো, মেঘের আনাগোনা, সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত মায়াবী পরিবেশ । লেখা রয়েছে একসাথে ৫ জনের বেশি না উঠতে । এখানে বড় বড় গাছের ডালে মোটা তার দিয়ে বেঁধে একটা ঝুলন্ত ব্রিজ রয়েছে যাতে জঙ্গলের এক প্রান্ত থেকে কিছুটা দূরে যাওয়া যায় ।একটু হাঁটাচলা করলে নড়তে থাকে । দারুন অনুভুতি হয় । আমরা বেশ কিছু ছবি তুলে রাখলাম । তারপর আস্তে আস্তে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পার করে গিয়ে বীজ থেকে নামলাম, কারণ আমরা না নামলে অন্যরা ওঠার সুযোগ পাবে না । হাতে সময় খুব কম । কারণ আমাদের লোলেগাঁও থেকে বেরিয়ে এবার লাভার পথে যেতে হবে ।
আগামি সংখ্যায় সমাপ্য
Name: Chandan Garai
Profession- Govt. Service
City- Ranibandh, Bankura / Kolkata
Hobbies- Photography, Travelling, Writting
Previous Tours- Kerala & Kanyakumari, Sandakphu, Sikkim, Spiti Valley, Sundarban, Dooars, Darjeeling, Kalimpong, Gopalpur – Chilika, Jungalmahal of Bankura, Purulia & Paschim Medinipur District etc.